বীজ থেকে চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমত বীজতলা তৈরি করতে হবে। শীতকালীন সবজির জন্য আশ্বিন-কার্তিক মাসে আর গ্রীষ্মকালীন সবজির জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলা তৈরি করতে হবে। আগাম ফসলের জন্য আরও একমাস আগে থেকে বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে।
টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, পুঁইশাক, পেঁপে ইত্যাদির বীজ প্রথমে বীজতলায় ফেলে চারা উৎপাদন করতে হয়। চারার বয়স চার সপ্তাহ থেকে একমাস হলে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। বীজতলার আকার ৩ মিটার × ১ মিটার হলে ভালো হয়। এরূপ একটি বীজতলায় জাতভেদে ১০-১২ গ্রাম বীজ দরকার।
পানির উৎসের কাছে আলো বাতাস যুক্ত উঁচু উর্বর জমিতে বীজতলা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজতলা মূল জমি থেকে কমপক্ষে ১০ সেমি উঁচুতে থাকে। দুটি বীজতলার মাঝে ৩০ সেমি নালা রাখতে হবে। বীজতলার মাটির সাথে পচা গোবর ও ১০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে দিতে হবে। অতঃপর সাবধানে
বীজ ছিটিয়ে ঝুরা মাটি দিয়ে বীজ তক্তার সাহায্যে উপরিভাগ সমান করে দিতে হবে এবং মাটি চেপে দিতে হবে। এরপর বীজতলায় প্রতিদিন নিয়মিত পানি দিতে হবে। বীজতলায় ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দেওয়া ভালো। কেননা এতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো সমানভাবে পানি দেওয়া যায়। তিন চার দিনের মধ্যে চারা বের হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজতলা শুকিয়ে না যায়। যেসব বীজের ত্বক পুরু সেসব বীজের চারা বের হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। পুরু ত্বকের বীজ ২৪-৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বীজতলায় বুনলে তাড়াতাড়ি চারা বের হবে। রোদ ও বৃষ্টি থেকে চারাকে রক্ষার জন্য বীজতলার উপর ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
বয়স বাড়ার সাথে চারার তাপ সহ্য ক্ষমতাও বাড়ে। তবে মাটির আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দিতে হবে। বিকেল বেলা সেচ দেওয়া ভালো। অতঃপর মাটি যখন শক্ত হবে তখন নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
বীজতলায় পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। পোকা আক্রমণ করার আগেই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সাধারণভাবে ১০ লিটার পানিতে ৪ চা চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি গুলে বীজতলায় ছিটাতে হবে। আর কোনো চারা রোগাক্রান্ত হলে তা তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ফুলকপি, বাঁধাকপি এসব সবজির চারা মূল জমিতে রোপণের পূর্বে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করা ভালো। চারা বড় হতে থাকলে ঝাঁঝরির পানিতে ১০ গ্রাম ইউরিয়া নিয়ে দ্রবণ তৈরি করে বীজতলায় ছিটালে চারা স্বাস্থ্যবান হয়। বীজতলায় আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য খড়কুটা বিছিয়ে দিতে হবে। চারার বয়স ৪-৫ সপ্তাহ হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।
চারা তোলার প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমত ঝাঁঝরির সাহায্যে সেচ দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে নিতে হবে। অতঃপর চারা তোলার জন্য খুরপি ও চারা বহনের ঝুড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। চারা তোলার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বিকাল বেলা। চারা সাবধানে তুলতে হবে যাতে শিকড় ছিড়ে না যায়। চারা তোলা হলে ঠিকমতো পরিবহন করে তৈরি করা মূল জমিতে নিতে হবে। চারা রোপণের সময় খুরপির সাহায্যে গর্ত করে বীজতলায় যেভাবে চারা ছিল ঠিক সেভাবেই গর্তে রোপণ করতে হবে।
কাজ: তোমার বাড়ির পাশে ৩ মিটার ০১ মিটারের একটি জায়গা নির্বাচন কর। ১. বীজতলায় চারা উৎপাদন কর। ২. কোদাল দিয়ে নির্বাচিত স্থানের মাটি ঝুরঝুরা করে চাষ কর। ৩. বীজতলা মাটি থেকে কমপক্ষে ১০ সেমি উঁচুতে হতে হবে। ৪. পচা গোবরের সাথে ১০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে বীজতলার উপর ছিটিয়ে দাও এবং মিশিয়ে দাও। মাটির ২ সেমি গভীরে বীজ বপন কর। ৫. প্রতিদিন বীজতলায় ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দাও। ৩-৪ দিনের মধ্যেই চারা বের হবে। ৬. যতদিন চারা মূল জমিতে রোপণের উপযুক্ত না হবে ততদিন এই পাঠের নির্দেশমতো বীজতলার যত্ন নাও। |
নতুন শব্দ: চারা উৎপাদন, বীজতলা, ঝাঁঝরি, দ্বিতীয় বীজতলা, ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি, ছাউনি, পুরু ত্বকের বীজ
Read more